** নিউট্রিশন ক্লাস রুম ওয়েবসাইটে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাগত ** নিউট্রিশন সাবজেক্ট এর প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট **

Digestive System

১.১ শরীরে খাদ্যের সদ্ব্যবহার  : পাচনতন্ত্র

খাদ্যের পরিপাক:যে -যে প্রক্রিয়ায় জটিল অদ্রবণীয় কঠিন খাদ্যবস্তু পৌষ্টিক নালীর  বিভিন্ন অংশ থেকে নিঃসৃত নানাপ্রকার উৎসেচক (এনজাইম) জৈবযৌগের সহায়তায় আদ্রবিশ্লিষ্ট হয়ে শোষণযোগ্য আত্তীকরণযোগ্য সরল তরল দ্রবণীয় খাদ্যকণায় রূপান্তরিত হয় তাকে খাদ্য পরিপাক বলে।

 

পৌষ্টিকতন্ত্র: প্রাণী দেহে খাদ্যগ্রহণ, গৃহীত খাদ্যের পরিপাক, পরিপাকলব্ধ খদ্দের শোষণ, আত্তীকরণ এবং অপাচ্য খাদ্যাংশের বহিষ্করণ যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে ঘটে  তাদের একত্রে পৌষ্টিকতন্ত্র বলে।

 পরিপাকগ্রন্থি: খাদ্য পরিপাকে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণকারী বিভিন্ন প্রকার উৎসেচক জৈবযৌগপূর্ণ পাচকরস নিঃসরণে সক্ষম গ্রন্থিগুলিকে পরিপাক গ্রন্থি বলে। 

 পরিপাকগ্রন্থির নাম: মুখোগহ্বরে অবস্থিত তিনজোড়া লালাগ্রন্থি, পাকস্থলীর গায়ে অবস্থিত পাকগ্রন্থি, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয় ক্ষুদ্রান্তের  নালীর গায়ে অবস্থিত আন্ত্রিক গ্রন্থি।  

পৌষ্টিক নালীর গঠন কার্যাবলী: পুষ্টিক নালী একটি নলাকার অংশ যা মুখগহ্বর, গলবিল, গ্রাসনালি, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, মলাশয় পায়ু নিয়ে গঠিত।   এই নালীর মোট দৈর্ঘ -১০ মিটার। 

A ) মুখগহ্বর : মুখটি পশ্চাদ ভাগে যে প্রকোষ্টে উন্মুক্ত থাকে তাকে বলে মুখগহ্বর।  মুখোগহ্বরকে ঘিরে এবং তার ভিতরে যে সব দেহাংশের সমাবেশ দেখা যাই তাদের মধ্যে প্রধান ওষ্ঠ, গলা, দাঁত, জিহ্বা এবং তালু।  লালাগ্রন্থির নালী এসে উন্মুক্ত হয় মুখগহ্বরে। মুখগহ্বরের মেঝেয় থাকে জিহ্বা এবং মুখগহ্বরের  ছাদকে বলা হয় তালু।


মানুষের মুখগহ্বর একটি প্রশস্ত গহ্বর যার মধ্যে তিনজোড়া লালাগ্রন্থি আছে।

. দাঁত প্রাপ্ত বয়স্ক লোকেদের উপরের পাটিতে ১৬ টি নিচের পাটিতে ১৬ টি করে মোট ৩২ টি দাঁত থাকে।  দাঁত চার রকমের - কর্তন (৪টি) , ছেদন (৪টি), চর্বন (৮টি), পেশন (১২টি)

কাজ: মুখগহ্বরে খাদ্যবস্তু প্রবেশ করার পরে সেগুলি দাঁতের দ্বারা চর্বিত হয়। দাঁত খাদ্যবস্তুর ছেদন, কর্তন এবং পেষণে সাহায্য করে।

. জিহ্বা বা জিভ : মুখগহ্বরের মেঝেয় থাকে জিহ্বা বা জিভ এবং মুখগহ্বরের ছাদকে বলা হয় তালু। জিহ্বা পেশী, আবরণী কোলা এবং গ্রন্থি দিয়ে গঠিত। জিহ্বার  উপরিতলটি অমসৃণ এবং তাতে অনেক উঁচু উঁচু অংশ আছে, এদের পিরকা বা প্যাপিলা বলে। জিহ্বার আগরাংশে মিষ্টতা, পশ্চাদ্ভাগে তিক্ততা, দুপাশে অম্লতা এবং মদ্ধভাগে লবনাক্ত সাদবাহী স্বাদকোরক আছে।

কাজ: i ) জিহ্বা কথা বলতে পারে। 

          ii ) খাদ্যবস্তুর চর্বন গলাধঃকরণ খাদ্যবস্তুর স্বাদগ্রহন করতে সহায়তা করে।  

         iii) মুখগহ্বরে চর্বিত খাদ্যবস্তু লালারসের সঙ্গে মিশ্রিত হয়।

B )  : মুখগহ্বরের ঠিক পিছনের দিকে গ্র্যাশনালির সূচনা পর্যন্ত অংশকে গলবিল বলে।  এটি ১৩ সেন্টিমিটার প্রশস্ত ফানেলের মতো অংশ।

কাজ: মুখগহ্বর থেকে খাদ্যবস্তুকে গ্র্যাশনালিতেব পৌঁছে দেয়।

C ) গ্র্যাশনালি: গলবিল এবং পাকস্থলীর মধ্যবর্তি পেশীবহুল ২৩ টি ২৫ সেনটিমিটার লম্বা নলের নয় অংশটিকে গ্র্যাশনালি বা অম্লনালী বলে।

কাজ: লালারসের সহযোগে চর্বিত পিষ্ট খাদ্যমন্ড এই নালিতে প্রবেশ করে এবং পেশির ক্রোম সংকোচনা প্রক্রিয়ায় ক্রমশ নিচের দিকে নেমে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে।

D ) পাকস্থলী: গ্র্যাশনালি পরবর্তী থলির নয় অংশটিকে বলে পাকস্থলী।  এটি ইংরেজি বর্ণমালার "J " এর মতো দেখতে।  এটি দর্ঘ্যে ২৫থেকে ৩০ সেনটিমিটার , প্রস্থে থেকে ১০ সেন্টিমিটার এবং গভীরতায় ১০ সেন্টিমিটার হয়।  পাকস্থলী নিম্নোক্ত চারটি অংশ নিয়ে গঠিত।  যথা -

i ) কার্ডিয়াক গ্র্যাশনালি শেষ প্রান্ত-সংলগ্ন পাকস্থলীর প্রথম অংশকে বলে কার্ডিয়াক প্রাথ বা হৃদপ্রান্ত।

ii ) ফান্ডস হৃদপ্রান্ত সংলগ্ন পাকস্থলীর বামদিকের অর্ধগোলাকৃতি অংশকে ফান্ডস বলে।

iii ) কর্পাসফান্দাসের পরবর্তী উল্লম্ব, পেশীবহুল অংশকে বলে কর্পাস বা দেহ।

iv ) পাইলোরি: এটি পাকস্থলীর শেষ অংশ, যা ডিওডিনাম সংলগ্ন।

কাজ:  i ) যান্ত্রিক কাজ -পাকস্থলী খাদ্যবস্তুকে গ্রহণ করে এবং তাদের সঞ্চয় করে রাখে। 

           ii ) ক্ষরণ - পাকস্থলী পাচক্রস ক্ষরণ করে।  পাচক্রসের পারাইটাল কোষ হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণ করে।  

           iii ) উৎপাদন - পাকস্থলী গ্যাস্ট্রিন, ক্যাসেলের ইনট্রিনসিক ফ্যাক্টর, সেরোটোনিন প্রভিতি রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন কর। 

           iv ) পরিপাক - পাকস্থলীতে খাদ্যরস খাদ্যবস্তুর পরিপাকে অংশগ্রহণ করে।  

           v  ) শোষণ - গ্লুকোজ, লবন্যল এবং এলকোহল এছাড়া কোনো কোনো ওষুধ পাকস্থলীতে অল্প মাত্রায় বিশোষিত হয়।  

          vi ) রেচন - মরফিন, প্রতিবিষ এইসমস্ত পদার্ঢ্য পাকস্থলীর মাধ্যমে রচিত হয়। 

          vii ) প্রতিবর্ত ক্রিয়া - পাকস্থলী থেকে বিভিন্ন রকমের প্রতিবর্ত ক্রিয়া উৎপন্ন হয়।

E ) ক্ষুদ্রান্ত্র :পাকস্থলীর পরবর্তী অংশকে ক্ষুদ্রান্ত্র বলে। মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রটি স্বল্পব্যাসযুক্ত, প্যাচানো নালীর মতো।  এটি দৈর্ঘে প্রায় . মিটার এবং প্রস্থে প্রায় . থেকে . সেনটিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট।  ক্ষুদ্রান্ত্র নিমোক্ত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা -

i ) ডিওডিনাম: এটি ক্ষুদ্রান্তে প্রথম অংশ এবং এটি ইংরেজি বর্ণমালা "U " এর মতো দেখতে।  এটির দৈর্ঘ ২৫ থেকে ৩০ সেনটিমিটার হয়।

ii ) জেজুনাম:  এটি ক্ষুদ্রান্তে মাঝের অংশ।  এটি থেকে মিটার দৈর্ঘযুক্ত অংশ।

iii ) ইলিয়াম: এটি ক্ষুদ্রান্তে শেষ অংশ। ইলিয়ামের অন্তঃপ্রাচীরে অসংখ ছোটো ছোটো আঙুলের ন্যায় অভিক্ষেপ দেখা যায়।  এগুলি পাচিত সরল খাদ্যের শোষণে সহায়তা করে।  এই অভিক্ষেপগুলিকে "ভিলাই" (একবচনে " ভিলাস" বলা হয়।

কাজ:  i ) পরিপাক - অগ্ন্যাশয় রস এবং আন্ত্রিক রোষের বিভিন্ন রকমের উৎসেচক ক্ষুদ্রান্তে প্রথম অংশে কার্বোহাইড্ৰেট, প্রতি ফ্যাটের পরিপাক করে। 

            ii ) শোষণ - পরিপাকলব্ধ অধিকাংশ খাদ্যবস্তু, জল, লবন ভিটামিন প্রধানত ক্ষুদ্রান্ত্রের ভিলাই - এর মাধ্যমে শোষিত হয়।  

            iii ) রেচন - ক্ষুদ্রান্ত্র প্রতিবিষ, ভারী ধাতু, উপক্ষার প্রভৃতি পদার্থ নির্গমনে সহায়তা করে। 

            iv ) জলসাম্য নিয়ন্ত্রণ - ক্ষুদ্রান্ত্র জলসাম্য বজায় রাখতে অংশ গ্রহণ করে।   

            v  ) ক্ষরণ - ক্ষুদ্রান্তে গ্রন্থি থেকে আন্ত্রিক রস ক্ষরিত হয়।

F ) বৃহদন্ত্র : ক্ষুদ্রান্ত্রের পরবর্তী অংশকে বলে বৃহদন্ত্র।  থেকে . মিটার দীর্ঘ, নলাকার, খাঁজবহুল এই অংশটি নিচের চারটি অংশ নিয়ে গঠিত -

 i ) সিকাম: এটি বৃহদান্ত্রের প্রথম অংশ।  এটি সেন্টিমিটার দীর্ঘ, উল্লম্ব অংশ বিশেষ।

ii ) কোলন: সিকামের পরবর্তী বৃহদান্ত্রের দীর্ঘতম অংশটি হলো কোলন।  কোলন চারটি অংশে বিভক্ত, যথা -

১। অ্যাসেন্ডিং (প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ)

২। ট্রান্সভার্স (প্রায় ২৫-৩০সেন্টিমিটার দীর্ঘ)

৩।  ডিসেন্ডিং(প্রায় টো-২৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ)

৪।  সিগময়েড (এটি ডিসেন্ডিং কোলন এর প্রসারিত অংশ বিশেষ, যা প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ)

iii ) মলাশয়: এটি বৃহদান্ত্রের শেষ অংশ এবন্দ সিগময়েড বাঁক থেকে পায়ুনালী পর্যন্ত বিস্তৃত।  খাদ্যের অপাচ্য অশোষিত অংশ, জীবাণু মিউকাসের সংমিশ্রনে মূল গঠন করে এবং মলাশয়েসাময়িক ভাবে সঞ্চিত থাকে।

iv ) পায়ুনালী: মলাশয়ের শেষ অংশ হলো পায়ুনালী যা প্রায় . সেনটিমিটার লম্বা।  পায়ুনালীকে শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছিদ্র হল পায়ুছিদ্র, যার মাদম্মে পাইউনাই দেহের শেষ ভাগে উন্মুক্ত হয়।

কাজ:  i ) শোষণ - বৃহদন্ত্রে কোনো পরিপাক হয় না।  কেবলমাত্র জল লবন শোষিত হয়।  

            ii ) মলের উৎপাদন - বৃহদন্ত্রে মল তৈরী হয়। 

            iii ) রেচন - বৃহদন্ত্র মলাশয়ের মাধ্যমে মল নির্গত হয়।

            iv ) সংশ্লেষ - বৃহদন্ত্রের কিছু ব্যাকটেরিয়া ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-K এবং B - কমপ্লেক্স - এর কিছু সংখক ভিটামিনের সংশ্লেষ ঘটায়।

মানুষের পৌষ্টিক গ্রন্থিসমূহ :  খাদ্য পরিপাকে সাহায্যকারী পৌষ্টিক গ্রন্থিগুলি হল - ১।  লালা গ্রন্থি, ২।  পাক গ্রন্থি, ৩।  যকৃৎ গ্রন্থি, ৪। অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি এবং ৫।  আন্ত্রিক গ্রন্থি।

এইসমস্ত গ্রন্থি থেকে আমাদের পরিপাকতন্ত্রে পাঁচ রকমের পরিপাক রস নিঃসৃত হয় , যেমন - লালা রস, পাচক রস, অগ্ন্যাশয় রস, আন্ত্রিক রস এবং পিত্ত রস।

১। লালাগ্রন্থি: মানুষের মুখগহ্বরে তিনজোড়া লালাগ্রন্থি বর্তমান।  যথা -

 i ) প্যারোটিড: এটি মুখগহ্বরের দুপাশে কানের নিচে অবস্থান করে।  এটি বৃহত্তম লালাগ্রন্থি।  প্রতিটি গ্রন্থি ৭টি করে উপখণ্ডক নিয়ে গঠিত।

ii )  : এটি জিভের নিচে দুপাশে অবস্থিত।

iii )  : এটি নিম্ন চোয়ালের দুপাশে অবস্থিত।

প্রতিটি গ্রন্থির শেষ প্রান্ত থেকে একটি করে নালী নির্গত হয়ে মুখগহ্বরের মেঝেতে জিভের নিচে উন্মুক্ত হয়। লালগ্রন্থিগুলির মাধ্যমে লালারস ক্ষরিত হয়।

 লালা রস :তিন জোড়া লালা গ্রন্থিষ্ঠিত তিন রকমের ক্ষরণকারী থলি থেকে সম্মিলিতভাবে যে চটচটে, ঈষৎ অম্লধর্মী তরল পদার্থ নিঃসৃত হয় তাকে লালা রস বলে।

লালা রসের pH .০২-.০৫।  বেশি অম্লধর্মী পরিবেশে এর কাজ নষ্ট হয়ে যায়।  ২৪ ঘন্টায় ১টো০ থেকে ১৫০০ মিলিমিটার লালা রস ক্ষরিত হয়।

 লালা : লালা রসে ৯৯.% জল এবং .% অন্যান্য উপাদান থাকে।  লালারসে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদানগুলি নিচের ছবিটিতে দেখানো হল -

 

কাজ:  i ) যান্ত্রিক কাজ : মুখোগহ্বরকে ভিজা রাখে।  ফলে কথা বলতে সাহায্য করে।  শুষ্ক খাদ্যবস্তুকে সিক্ত করে চিবাতে গলাধঃকরণে সাহায্য করে।

            ii ) সুরক্ষা : মুখগহ্বরের  শ্লৈষ্মিক  স্তরকে যান্ত্রিক ক্ষয়ক্ষতির ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে।

            iii ) পরিপাক : ১।  লালারসের টায়ালিন নামক উৎসেচক সিদ্ধ শ্বেতসারকে মোল্টজে পর্যন্ত করে।  

                                   । লালারসের মল্টোজ উৎসেচক শ্বেতসার গ্লাইকোজেন পরিপাকে উদ্বুদ্ধ মল্টোজকে পরিপাক করে অনু গ্লুকোজ উৎপন্ন করে।

           iv ) ব্যাকটেরিয়া বিনষ্টকারী কাজ : লাল রসের লাইসোজাইম নামক এনজাইম কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।

           v ) বাফার : লালারসের ফসফেট ও মিউসিন বাফার হিসাবে কাজ করে।

           vi ) জলসাম্য :  দেহের জলসাম্য রাখতে সাহায্য করে।  দ্রাবক হিসাবে কাজ করে। খাদ্যের স্বাদগ্রহনে সাহায্য করে।

           vii ) রেচন : লালারসের মাধ্যমে কিছু ভারী ধাতু, এন্টিবায়োটিক এবং উপক্ষার ইত্যাদি রচিত হয়।